জিনোম ২

২০৩০ সাল (চলমান)

আমি যে খুব বেশি সাহসী তা না। কিন্তু RCB থেকে ডাক আসার পর আমার মধ্যে কোন প্রকার ভয় ফিল করছিনা। মনে হচ্ছে, আমি বোধ হয় এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আসলেই আমি প্রস্তুত ছিলাম, আমার অবচেতন মন এটা জানতো। তাই আমার কাছে ব্যপারটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে গত মাসে যখন সামান্থা চলে গেলো, তখন খুব আশ্চার্য হয়েছিলাম। 

সামান্থা আমাদের দুই ব্লক ডানের মাইনাস ৭ তলায় থাকতো। জিনিয়াস ছাত্রী। যদিও গত ১০ বছরে ধরে পৃথিবীতে আগেকার মতো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। যা আছে সবই ভার্চুয়াল বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস করো, পরীক্ষা দাও। সেখানে কি করে যেনো সব সময়ই সামান্থা সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে ফেলতো। রেজাল্ট দেয়ার পর আমি যখন অনলাইনের আমার রোল খুজে বেড়াচ্ছি নিচের সিরিয়ালে তখন দেখতাম একেবারে প্রথম লাইনটাতে সামান্থার নামটা সগৌরবে বসে আছে। তাই তার প্রতি সম্ভোবত ইর্ষা ছিলো আমার, কোন আগ্রহ নয়। গ্রুপে ক্লাস করতে হতো বলে তার সাথে পরিচয়ও ছিলো। 

হঠাৎই সকালে সামান্থা ফোন দিলো আমাকে। সচরাচর আমরা গ্রুপ কলে কথা বলি। সামান্থার সাথে আমার কখনো এখাবে ফোনে কথা হয়নি।

  • আমার ডাক এসেছে RCB থেকে। _সামান্থা
  • কি বলো, কেনো? _আমি
  • অস্য সবাইকে যেজন্য ডাকে। _সামান্থা
  • তোমাকে ডাকার কারন তুমি হলো  সুপার ব্রিলিয়ান্ট। _আমি
  • এবার হলোতো, তোমার আমার উপর যত রাগ ছিলো এবার হয়তো কিছুটা মজবে। _সামান্থা
  • কি বলো? তোমার উপর আমার রাগ থাকবে কেনো? _আমি
  • আমি বুঝি, তোমাদের ছেলেদের সব কিছুই আমরা বুঝি। _সামান্থা
  • না সামান্থা, তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই। তুমি অনেক ভালো স্টুডেন্ট তাই বলে হয়তো কিছুটা ইর্ষা কাজ করে, কিন্তু রাগ করতে যাবো কেনো?
  • আরিয়ান, তোমার সাথে একটা কথা শেয়ার করতে চাই। করবো? _সামান্থা
  • হুম, বলো।
  • ওরা আমাদেরকে ডেকে নিয়ে যায় RCB তে। আমরা সবাই জানি ওখানে ভাইরাসের উপর রিসার্চ হয়। পৃথিবীকে ভাইরাস মুক্ত করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা ওরা করছে। আমি দেখেছি প্রথম ৩ বছর বেছে বেছে বয়স্ক এবং বিশেষজ্ঞদেরকে ডেকে নিতো। এরপর ৩ বছর ওরা অপেক্ষাকৃত মধ্যবয়স্ক এবং ব্রিলিয়ান্টদেরকে নিচ্ছে। কিন্তু এরপর থেকে তারা বেছে বেছে শুধু ব্রিলিয়ান্ট বাছাই করছে না। ওদের এখনকার সিলেকশনের মধ্যে কম বয়স্কই থাকছে সবাই। _সামান্থা
  • কি বলো? এই যে তোমাকে বাছাই করলো? তুমিতো ব্রিলিয়ান্ট। _আমি
  • তুমি যদি একটু খেয়াল করো তবে দেখবে গত ক’মাসে আমাদের এলাকা থেকে সাফি, রিতু, ওমর, রাতুল, রিহাম ও প্রীতমকে ডেকে নিলো। তুমি জানো ওরা সবাই আমাদের সম বয়সি। 
  • হুম, তুমি ঠিক বলেছ। _আমি
  • আমার সাইবার ক্রেক নামে একটি গোপন টিমের সাথে পরিচয় আছে। ওদের মাধ্যমে আমি কিছু খবর পাই। করোনাভাইরাস এর জিনোম অনলাইন প্রোফাইল যেটি ইতিমধ্যে সবার জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছে, যে কারনে বিশ্বের সবাই এ ভাইরাসের আপডেট বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে জানতে পারে এবং এর প্রতিষেধক তৈরীতে কাজ করতে পারে। সাইবারক্রেক বর্তমানে সে জিনোম নিয়ে কাজ করছে।
  • তাই নাকি? করোনাভাইরাস নিয়ে সাইবারক্রেক এর কাছে আপডেট তথ্য কি আছে? _আমি
  • হ্যা। ওরা জানিয়েছে গত দশ বছরে করোনাভাইরাসের উপর প্রচুর গবেষনা করেছে পৃথিবীর তাবত বিজ্ঞানী সহ অসংখ্য মানুষ। এর জিনোমের AI গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস তৈরী করা হয়েছে। একে বিভিন্ন ভাবে বিশ্লেষন করে এ যাবত অসংখ্যবার এর প্রতিষেধক তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু আশ্চার্যজনক ভাবে প্রতিষেধক প্রয়োগের কিছুদিনের মধ্যেই করোনা তার জিনোমের মধ্যে পরিবর্তন করে নিয়ে প্রতিষেধকটি তার উপাদেয় হিসেবে তৈরী করে নেয়। _সামান্থা
  • কি বলো? এতো সাংঘাতিক শক্তিশালি আর চালাক ভাইরাস। _আমি
  • হ্যা, তাই। গত এক দশকে ভাইরাসটি তার মধ্যে অনেক প্রতিষেধক হজম করে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলেছে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হলো বিজ্ঞানীরা এখন অনেকটা আশা ছেড়েই দিয়েছে এ ভাইরাস থেকে পরিত্রানের। এখন আশা অনেকটাই নিরাশার পর্যায়ে চলে এসেছে।

এপর্যায়ে সামান্থা কিছুখন চুপ করে থাকে। আমি ভেবে অস্থির হয়ে যাই। গত দশটি বছর মানুষ মনের মধ্যে একটি আশা নিয়ে প্রকৃতির সাথে সর্বোচ্চ যুদ্ধ করে নিজেদেরকে টিকিয়ে রেখেছে এই ভেবে যে, একদিন এই ভয়ংকর ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরী হবে এবং এ থেকে মানুষ অযাচিত মৃত্যু থেকে রেহাই পাবে। কিন্তু সামান্থার কথা শোনার পর আমার পায়ের নিচের মাটিটা মনে হলো কিছুটা নড়ে গেলো। 

  • আমাকে আগামীকাল চলে যেতে হবে। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি মনে হচ্ছে বিজ্ঞানিদের উপর পর্যায়ে কোন একটি বড় পরিকল্পনা আছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেছে বেছে কম বয়সী বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ বাছাই করে নিচ্ছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনার ব্যপারটা আমার কাছে অস্পষ্ট। তুমি জানো এখন পর্যন্ত চলে যাওয়া কেউই আর ফেরত আসেনি। অতএব, আমার যাওয়াটাও একেবারেই চলে যাওয়া। মোটামুটি সবার কাছ থেকেই বিদায় নিয়ে নিয়েছি। সবশেষে তোমাকে ফোন করলাম। তুমি ভালো থেকো। আমার জন্য দেওয়া করো। অন্তত আমার মৃত্যুটা যেনো ভারো মৃত্যু হয়। _সামান্থা

এপর্যায়ে আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি বলবো। মনটাকে খুব দুর্বল মনে হচ্ছিলো। সান্তনা দেবার কথাও মাথায় আসলো, কিন্তু মেকি সান্তনা দিতে আমার ভালো লাগে না।

  • সামান্থা, যদিও তোমাকে আমি ইর্ষা করতাম কিন্তু সত্যি জেনো আমি তোমার ধরনটাকে খুব পছন্দ করতাম। তুমি সব সময়ই সেরা কাজটিই করতে। সম্ভোবত ভালোটাই করতে তুমি। তোমার মধ্যে অন্যরকম একটা ব্যপার আছে। তোমার চিন্তাগুলোর সাথে আমি মনে মনে একাত্ব হতাম। দোওয়া করি তোমাকে আল্লাহ ভালো একটা ভবিষ্যত দান করুন। _আমি
  • খোদা হাফেজ বন্ধু। ভালো থেকো।

তিন দিন পর

একটি মেইল এসেছে সামান্থার কাছ থেকে। গত দুই দিন আগেই সামান্থা চলে গেছে। অতএব মেইলটা সামান্থা যাবার আগেই পাঠিয়ে গিয়েছে তিন দিনের টাইমার সেট করে। আজ তিনদিন পর মেইলটা আমার কাছে এসেছে। 

প্রিয় আরিয়ান,

কি আশ্চার্য হচ্ছো ‘প্রিয়’ শব্দটার দিকে তাকিয়ে? কিছু আশ্চার্যকর বিষয় তোমাকে জানাবো এখন। হিসেব মতে আমার চলে আসার তিন দিন অতিবাহিত হলো আজ। আমি যেখানে যাচ্ছি সেখান থেকে তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করা যাবেনা আমি জানি, কিন্তু আমি খুব খুশি হবো যদি কোনভাবে তোমার সাথে যোগাযোগের একটি ব্যবস্থা করা যায়। যাইহোক, তোমাকে কিছু কথা বলবো আজ।

তুমি হয়তো খেয়াল করেছো গত দুই বছর ধরে জেনেটিক সাইন্স এর বিষয়টিতে প্রতি পরীক্ষাতেই তুমি ৮০% এর উপর মার্ক পাচ্ছ। অথচ তুমি যে পরীক্ষা দিয়েছিলে তাতে তোমার কোন ভাবে পাশ করার কথা।

তুমি গত তিন বছর ধরে জাপান বেইজ জেংফং নামক অর্গানাইজেশন থেকে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা করে স্কলারশীপ পাচ্ছো। যেদিন তুমি জেংফং এর বাছাই পরীক্ষা হয় সেদিন সারা পৃথিবী থেকে কম করে হলেও দশ হাজার পরীক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছিলো। মাত্র ৯০ জনের মধ্যে তুমি কি করে টিকে গেলে তুমি?

তুমি জানো যুক্তরাষ্ট্র বেইজ ডোমেইন প্রোটোকল বর্তমানে সব ধরনের ইন্টারনেট ফেসিলিটি দিয়ে থাকে। যা দেশের ভিআইপি এবং বিশেষ বিশেষ কিছু ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ পেতে পারে না। তুমি তোমার আইপি চেক করে দেখেছো যে কোন এক অদৃশ্য কারনে একদিন তোমার আইপি এড্রেস চেঞ্জ হয়ে গেছে এবং তুমি দুর্দান্ত গতির একটি সার্ভারে কানেকটেড হয়ে গেছো। তোমার কৌতুহল কম থাকার কারনে এমন ঘটনা কি করে ঘটলো তা নিয়ে তুমি মাথা ঘামাওনি।

এমনি অনেক কিছু দিয়ে গত চারটি বছর আমি তোমার সাথেই ছিলাম। তুমি বোঝনি এক বিন্দুও। আসলে আমি এমনি। তোমাদের সো কল্ড ব্রিলিয়ান্ট বলতে যা বোঝায়। আমি মেধাবি হয়তো ততটা না যতটা কল্পনা প্রবন। আমি কল্পনার জগতে বিচরন করতে পছন্দ করি। বলতে পারো এটা আমার একটা প্যারালাল ওয়ার্ড। 

আমার এ কল্পনার জগত নিয়ে তোমাকে কিছু কথা বলি। তুমি জানো হয়তো আমি খুব শুক্তিশালী একটি সার্ভারের সাথে কানেকটেড থেকে সব সময় বিভিন্ন কিছু নিয়ে খোজ খবর করতাম। আমার অসম্ভব মাত্রার কৌতুহল আমাকে দিয়েছিলো এক অতিপ্রাকৃতিক জগত। আমি আমার নিজের বানানো AI দিয়ে তৈরী করেছিলাম এমন একটি ইন্টারফেস যার মাধ্যমে আমার ভাবনাগুলোকে সহজেই ইন্টারনেটেরে বিশাল জগতের সাথে কমুনিকেশন করতে পারতাম। নিমিশেই জেনে নিতে পারতাম আমার প্রয়োজনগুলো।

তুমি কি জানো এ পর্যন্ত আমাদের বয়সি যতগুলো মানুষকে ওরা নিয়ে গেছে তাদের প্রায় সবার খোজ খবরই আমার কাছে ছিলো। তাদের প্রত্যেকেরই কোননা কোন অস্বাভাবিক ক্ষমতা ছিলো। তার মানে ধরে নেয়া যায় উপর মহল থেকে সবার উপর চোখ রাখা হয় সব সময়। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট আমাদের যোগ্যতাই আমাদেরকে এভাবে নিয়ে যাওয়ার মুল কারন।

এক্ষেত্রে তোমার কোন আশংকা নেই। কারণ তোমার মধ্যে কোন অস্বাভাবিক ক্ষমতা নেই।

শেষ করার পুর্বে তোমাকে একটা তথ্য দেই। করোনা ভাইরাসের উপর আমার কিছু নিজস্ব আর্টিক্যাল ছিলো। মেইলের সাথে এটাচ করে দিলাম। আর্টিক্যালগুলো গোপন রেখো।

শেষ করছি। হয়তো এটাই তোমার সাথে আমার শেষ কথা। 

কি ‘হয়তো’ বলাতে হাসছো? তোমাকে বলেছিনা, আমার একটা কল্পনার জগত আছে সে জগতটা আমার কাছে কল্পনা হলেও বাস্তবের চাইতেও বাস্তব। সেখানে আমি দুরন্ত বিকেলে দুই পাশে বেনি ঝুলিয়ে পুকুর ঘাটে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি। আরিয়ান নামের কৌশর পেরুনো ছেলেটি সাতরে যাচ্ছে পুকুরের মাঝে ফুটে থাকা টকটকে লালপদ্ম ছিড়ে আনবে বলে।

-০-

Previous Article

জিনোম ১

Next Article

জিনোম ৩

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe to our Newsletter

Subscribe to our email newsletter to get the latest posts delivered right to your email.
Pure inspiration, zero spam ✨