সকালে মেইল এসেছে আগামীকাল সকাল ৯ টায় RCB তে যোগ দেয়ার জন্য। RCB উচ্চমাত্রার একটি রিসার্চ সেন্টার। গত ১০ বছরে কম করে হলেও সাতশত বিভিন্ন বয়সের এবং পেশার মানুষকে সেখানে ডেকে নেয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারাকে যদিও সবাই অতি আনন্দের সাথে গ্রহন করা উচিত কিন্তু তা নয়। যারা যাচ্ছে তাদেরকে তার পরিবার অতি বিষাদ এবং দুঃখভরা মনে বিদায় দিচ্ছে। কারণ, যারা যাচ্ছে তারা আর ফিরে আসছে না। এমনকি যাবার পর তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ থাকছে না। তাদের প্রত্যেকের পরিবার পরিজন অধির আগ্রহে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে ন্যুনতম একটি খোজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোন প্রকার খোজ পাওয়া যায় না।
RCB (Research Center of Bangladesh) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের শেষের দিকে। এটি এমনি একটি টপ সিক্রেট প্রজেক্ট যে এর অবস্থান কোথায় তা হাতে গুনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানেনা। এটি প্রতিষ্ঠিত হবার কারণটা শুরু হয়েছিল আরো দুই বছর আগে।
২১১৯ সাল
শতাব্দির শক্তিশালী CAVID-19 ভাইরাস আক্রমন করে মানব জাতির উপর। কিছু বুঝে উঠার আগেই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে মারা যায় লক্ষাধিক মানুষ। বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এর কোন প্রতিকার বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রতিদিন লাশের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। যেহেতু CAVID-19 একটি ছোঁয়াচে এবং সহজে বহনযোগ্য ভাইরাস সেহেতু মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরতে লাগলো সমস্ত মানুষ জাতির উপর।
লক্ষ্য করা গেলো যে, কি এক বিস্ময়কর কারনে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে যেগুলো জ্ঞান, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্জ, অর্থ, সম্পদ এবং সর্বপরি প্রযুক্তিতে উন্নত সেখানে মানুষগুলো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে লাগলো গনহারে এবং বুঝতে না বুঝতেই হাজার ছাড়িয়ে লক্ষ মানুষ মারা গেলো। অন্যান্য দেশগুলো যেগুলো অপেক্ষাকৃত অনুন্যতম তারা যে একেবারে নিরাপদ রইল তা নয়। তাদের মধ্যেও আক্রান্ত হতে লাগলো এবং মারাও যেতে থাকলো, কিন্তু তুলনামুলকভাবে খুবই কম।
আমেরিকা, ইটালী, স্পেন, চীন, জাপান ও কোরিয়ার মতো উন্নত দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও শক্তি ব্যায় করে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরীতে রাত দিন কাজ করতে লাগলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হলো। দেখাগেলো তাদের তৈরী প্রতিষেধক ব্যবহার করে ভাইরাসটিকে আক্রান্ত করা যাচ্ছে।
সমগ্র পৃথিবীতে হৈচৈ পরে গেলো। প্রতিশেষধ উৎপাদনে সকল উন্নত দেশগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যায় করার জন্য এগিয়ে এলো। সমস্ত মানুষজাতি বিশাল এক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবার আনন্দে নিশ্চিন্ত হবার প্রয়াস পেলো।
পরক্ষনেই ভয়াবহ একটি খবর পুরো পৃথিবীকে দিত্বীয়বারের মতো স্তব্দ করে দিলো। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিল থেকে জানানো হলো-
করোনাভাইরাসে রয়েছে একসুত্রক আরএনএ জিনম। এটি পুর্বের সকল ভাইরাসের তুলনায় অনেকটাই বড় এবং শক্তিশালি। ভয়ংকর ব্যপারটি হলো এটি তার নিজস্ব জিনম কোড নিজে নিজে পরিবর্তন করে আবার পুনরায় পুনর্গঠন করে নিতে সক্ষম। যে কারনে প্রতিষেধকগুলো সাময়িক ভাবে কাজ করলেও পরবর্তীতে করোনাভাইরাস তার জিনোমের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে নেয়ার কারনে প্রতিষেধকগুলো আর কোন কাজেই লাগে না।
আবারো নিরাশায় ডুবে গেলো সমগ্র পৃথিবীর মানুষ।
এরি মধ্যে দেখা দিলো আরেক বিপর্যয়। যারা দীর্ঘদিন যাবত বিজ্ঞানাগারে থেকে থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষনা সহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছিলো তাদের অনেকের মধ্যেই মানুষিক কিছু উপসর্গ দেখা দিতে লাগলো। যেমন কেউ কেউ হঠাৎ হঠাৎ তাদের নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রন হারাতে লাগলো, অবশ্য অল্প সময়ের জন্য। কেউ কেউ মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলো। কেউ আবার স্মৃতির অনেক কিছুই ভুলে যেতে লাগলো।
এক সময় এমন হলো যে, একজন বিজ্ঞানী বা ডাক্তার দিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করানো অসম্ভব হয়ে পরলো। এতে করে ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরীর প্রক্রিয়া অনেকটাই ধীর হয়ে এলো।
এদিকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই দ্রুত বাড়তে লাগলো। ৭৭৭ কোটি জনসংখ্যার ভরপুর পৃথিবীকে হঠাৎই মনে হলো শুন্যের দিকে ছুটে চলা একটি গতিশিল বস্তুতে।
২০২৩ সাল
পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ বড় বড় শহরগুলো পরিনত হয়েছে মৃত্যুপুরিতে। কোথাও কোন প্রানের স্পন্দন নেই যেনো। যদিওবা কিছু কিছু স্থানে মানুষ টিকে আছে সর্বোচ্চ ইনটেনসিভ কেয়ারে। মাটির নিচে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কোন রকমে নিজেদেরকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা।
এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরী করা সম্ভব হয়নি। যেটাই তৈরী করা হয়েছে দেখা গেছে পরক্ষনেই সেটা আর কাজ করছে না।
এরি মধ্যে দুর্বল দেশগুলো যারা কিনা এতো দিন অনেকটাই নিশ্চিন্ত ছিলো। তাদের দেশের আক্রমনের প্রাভাব খুবই কম ছিলো। যদিওবা ২% এর মতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিল কিন্তু এর মধ্যে ১% চাইতে বেশি মানুষ সুস্থও হযে যাচ্ছিলো। কিন্তু দেখাগেলো বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন দেখলো দুর্বল দেশগুলোতে সংক্রমনের মাত্রা একেবারেই কম তখন তারা অতি গোপনে বিভিন্ন ভাবে সেইসব দুর্বল দেশগুলোতে চলে যেতে লাগলো এবং বসতি স্থাপন করলো। এতে করে যা হবার তাই হলো।
২০২৭ সাল
পৃথিবীতে এখন সর্বমোট জীবিত মানুষের সংখ্যা ২শ কোটিরো নিচে নেমে এসেছে। এখন আর শুধু উন্নত দেশ নয় সারা পৃথিবীতে এখন একই হারে মানুষ মারা যাচ্ছে। যদিও এখন মারা যাবার গতি কম। কারণ এখন মানুষইতো কম। কিন্তু যারা বেচে আছে তারা কি এক অস্বাভাবিক কারনে বেচে আছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে তাদেরও সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবন থেকে দুরে চলে এসেছে। বেশিরভাগ মানুষই মাটির নিচে কিংবা বিশেষ ভাবে তৈরী দুর্গে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি থেকে নেমে এসেছে মাত্র ২ কোটির কিছু উপরে। চারিদিকের বাতাস দুষিত হয়ে আছে। যদিও গত কয়েক বছর আগে বিশেষ একটি উদ্ভাবনের ফলে মৃত মানুষের সতকারের সহজ ব্যবস্থা তৈরী করা হয়েছে। এটি সর্বপ্রথম তৈরী করেছে জাপান। এ যন্ত্রে মৃত মানুষেকে রেখে সুইচ অন করে দিলে ২ মিনিটের মধ্যে মানুষটিরে সকল জীবিত কোষ (আরএনএ ও ডিএনও সহ) একেবারে জড় বস্তুতে পরিনত করে ফেলে। এর শক্তিশালি রেডিয়েশন সরাসরি জিনমের ভেতরে নিউক্লিওটাইডের অনুক্রমকগুলোকে ব্যবচ্ছেদ করে দেয়। এ আবিস্কার অন্যান্য দেশে ব্যবহার করে কিছুটা হলেও পরিবেশ দুষন কমিয়ে এনেছে।
প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব চেষ্টায় গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও গবেষনা চালানোর জন্য স্থাপন করেছে RCB। দেশের সকল জিনিয়াসদের নিয়ে আসা হচ্ছে এখানে কাজ করার জন্য। দুষনমুক্ত এবং নিরপাদ রাখার জন্য এটির সর্বোচ্চ গোপনিয়তা বজায় রাখা হচ্ছে।
এরি মধ্যে ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন যাবত যারা এভাইরাস নিয়ে কাজ করে তারা কোন না কোন ভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে। শত চেষ্ট করেও এটিকে রোধ করা যাচ্ছে না। যদিও এরি মধ্যে আবিস্কৃত হয়েছে করোনাভাইরাস ডিটাকটর। বিভিন্ন যন্ত্র এবং বিশেষ এক ধরনের চশমা। এটি চোখে পড়ে ভাইরাসের অস্থিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। যে কারনে এখন গবেষনা কিছুটা সহজ হয়েছে। এবং সতর্ক থাকাটাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
প্রথম খন্ড সমাপ্ত